বিবরণ
এক যুগ পেরিয়ে গিয়েছে লর্ড ডালহৌসির ষড়যন্ত্রে, কলকাতার নিকটস্থ মেটিয়াবুরুজে নির্বাসনে আছেন অবধের প্রাক্তন নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ। তাঁর প্রিয় মুল্ক লখনউতে ফের ফিরতে পারবেন না জেনেই নবাব মেটিয়াবুরুজেই তৈরি করেছেন আস্ত একটা লখনউ, ছোটা লখনউ। লখনউ থেকে কেবল গাইয়ে-বাজিয়ে-বাইজিরা নন, নবাবের পিছু পিছু হাজির কবি ও শায়ের তাঁদের মুশায়েরা নিয়ে। খানাখাজানা ছাড়া তো সংস্কৃতি জমে না, লখনউয়ের রসনাও এল নবাবের সঙ্গে। নবাব নিজে কবিতা লেখেন, দোলউৎসবে কৃষ্ণ সেজে হোরি খেলেন। বিচ্ছিন্ন ফিরিঙ্গি সংস্কৃতির বিপরীতে তিনি বিশ্বাস করেন গঙ্গা-যমুনা তহজিব, হিন্দু-মুসলমানের যৌথ কৃষ্টিতে। এদিকে বিলেত থেকে ব্যারিস্টার হয়ে সদ্য কলকাতা ফিরেছেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। বিলেত যাওয়ার আগে বাংলা সাহিত্যের আকাশে ধূমকেতুর মতো আবির্ভূত হয়ে একের পর এক নাটক-প্রহসন-মহাকাব্য রচনা করে তিনি তখন মহাকবি। সাহিত্যের সমস্ত পুরাতন খিলান আর স্তম্ভ ধ্বংস করে নতুন ইমারত গড়েছেন অমিত প্রতিভায়। কিন্তু বিলেত থেকে ফিরে আইনব্যবসা বা কাব্য, কোনও ক্ষেত্রই তেমন জুতের হচ্ছে না, তবে কি দেবী লক্ষ্মীর মতো দেবী সরস্বতীও তাঁর বরপুত্রের থেকে মুখ ফেরালেন?
এই আখ্যানে দুই কবি ও উনিশ শতকের স্বনামধন্য বহু চরিত্রের পাশাপাশি আছে আরও একটি চরিত্র, কল্লোলিনী তিলোত্তমা, কলকাতা। এ সেই সময়ের কাহিনি যখন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির গাঁ-গঞ্জ থেকে কাতার দিয়ে হরেক কিসিমের লোক আসছে শহরে কাজের খোঁজে, রাস্তায় জ্বলে গ্যাসের বাতি, পথে চলে ঘোড়ায় টানা গাড়ি, ভদ্রবাবুদের আলোকিত নবজাগরণের পাশে অপরাধের নীচের মহল গড়ে উঠছে অন্ধকারে, ডিহি কলকাতা আমূল বদলে গিয়ে তৈরি হচ্ছে মহানগর।