বিবরণ
কবিতাই একজন সৎ কবির মাথা তোলবার, বেঁচে ওঠবার, ভালবাসার অনন্য অবলম্বন। কবিতাই কবির ব্যাপ্ত, বিশাল জীবনকাহিনি। এ-যুগের তরুণ কবিদের মধ্যে সব থেকে শক্তিমান জয় গোস্বামীর কবিতার সঙ্গে যাঁরা পরিচিত তাঁরাই জানেন, আধুনিক বাংলা কবিতায় তিনি অগ্রপথিক। সৃষ্টি-বৈচিত্র্যে, স্বতন্ত্রস্বাদ রচনায় এবং ছন্দে-ছন্দোহীনতায় তিনি বিশিষ্টতম। তাঁর পাগলী, তোমার সঙ্গে কাব্যগ্রন্থের শরীরে ধরা আছে এইসব অনুভবী বৈশিষ্ট্য। এই গ্রন্থে আছে ‘মৃত্যুটি রচনা করি’, নামের দীর্ঘ কবিতা। ‘তার চেয়ে, কী দরকার ঘরে বসে লেখো তো মৃত্যুর/একটি রচনা, যার চতুর্দশ পদে পদে ভয়।/সহস্ৰ জাতির থেকে ফোঁটা ফোঁটা জাতি রক্ত হয়/ সে রক্ত একটি পাত্রে ধরো তুমি, ঠেলে দাও দূর/দূর ভবিষ্যৎ কালে...।’ এই কবিতার ছন্দ তুলেছিল বিতর্কের ঝড়। তেমনই আর একটি দীর্ঘ কবিতা ‘পাঁচালি: দম্পতিকথা’ ছান্দসিকদের জড়িয়ে নিয়েছিল বিসংবাদে। যে-কবি এখানে উচ্চারণ করেছেন মর্মমূল থেকে ছিঁড়ে আনা শব্দবন্ধ ‘পাগলী, তোমার সঙ্গে ভয়াবহ জীবন কাটাব/পাগলী, তোমার সঙ্গে ধুলোবালি জীবন কাটাব’— তিনি গেয়ে উঠেছেন এক নিভৃত নিশ্চুপ সামগাথা: ‘ওই মেয়েটির কাছে/সন্ধ্যাতারা আছে।’ এই কাব্যগ্রন্থ এক সৎ কবির নিবিড় আত্ম-আবিষ্কার।সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত।