বিবরণ
এই সেই সায়ংকাল যখন কবির প্রকৃতি জুড়ে পুরিয়া-ধানেশ্রী রাগ। যখন প্রকাশই প্রধান লক্ষ্য। অবয়ব নয়। তাই গল্প, না কবিতা, নাকি গল্প-কবিতার সীমা মুছে দেওয়া গহিন ভাষ্য—এ নিয়ে আর ব্যস্ত নন আমাদের কবি। বরং বিকেলবেলার কবিতাগুলি এবং ‘ঘাসফুলের কবি’ পাঠ করলে কবির এই ইচ্ছাই স্পষ্ট হয়—যে-কথা কোথাও বলা হয়নি, সেইকথা বলার এখন যথাযোগ্য সময়। গল্প হিসেবে চিহ্নিত ‘ঘাসফুলের কবি’-র এই যে কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্তি, তার কারণ কবি তাঁর অভিজ্ঞতার সত্যকে প্রকাশ করতেই চেয়েছেন কেবল। আর, ‘ঘাসফুলের কবি’ সর্বাঙ্গীণ এক কবিতার মুখপাত্রও যে তা পড়লেই বুঝতে পারা যাবে। সব মিলিয়ে এই গ্রন্থ, এ-ও জয় গোস্বামীর এক নতুন ভাষায় ঋদ্ধ। প্রৌঢ়তার আলোমাখা। অস্তের গনগনে আঁচে উদার সত্যের ধ্বনি সমস্ত পৃষ্ঠায়। কবির ভাষাতেই তার মূর্ত থাকা—“দেখো, সূর্য ঢলেছেন, তাঁরও মুখে প্রৌঢ়তার আলো।/অস্তের আগুন বেশি? তবে তাকে শান্ত রাখা ভাল।” কীভাবে আসবে শান্তি? কবিতাই পারে তাকে শান্তি দিতে। কিংবা কবিতার মতো খেলা, যে-খেলার জন্য অপেক্ষা করা যায় সারাটি জীবন। অপেক্ষা থাকে। আর কবিও লেখেন—“কবি-জীবনের এই ধুলোওড়া বিকেলবেলায়/তোমার খেলাটি দ্যাখো আমার এই অবসাদ-দীপ্ত খেলাটিকে/অঙ্গার দু-নখে বিধে দু-ডানা ঝাপটিয়ে/সূর্যাস্ত পেরিয়ে উড়ে যায়…”।