বিবরণ
‘মধুরস কথা ভাই জানিবে তাহাতে/বান্ধা বটতলায় তারে দিয়াছি ছাপিতে।...’ উনিশ শতকে উত্তর কলকাতার বটতলায় জমজমাট বাংলা ছাপা হরফের হাট। কিন্তু বটতলা কি শুধু কলকাতার চৌহদ্দিতেই আটকে ছিল সেদিন? লেখক বলেছেন বটতলা ছিল অন্যত্রও। পৃথিবীর সব বড় শহরেই উচ্চকোটির কুলীন সংস্কৃতির পাশাপাশি বহমান ছিল আমজনতার স্বতন্ত্র লৌকিক সংস্কৃতির স্বতঃস্ফূর্ত ধারা। বলতে গেলে সমান্তরাল এবং সমান বেগবান। ঢাকা থেকে লন্ডন, প্যারিস—কোনও শহরই বাদ নেই এই সাংস্কৃতিক বিভাজন থেকে| দ্বিতীয়ত, বটতলা মানে কি শুধুই ইতর ভাবালু রসালপুস্তিকা? অবশ্যই নয়। ইংরেজিতে যাকে বলে পর্নোগ্রাফি, বটতলায় তা খুঁজে পাওয়া ভার। বটতলার বিপুল সম্ভার বৈচিত্র্যে, গুরুত্বে এবং রস সৃষ্টিতে ছিল অতুলনীয়, লোকশিক্ষা প্রসারে সে ভূমিকা রীতিমত ঐতিহাসিক, বলছেন লেখক। দরবারি সাহিত্যের সঙ্গে নাগরিক এই লোকসাহিত্যের লেনদেনও ছিল বলতে গেলে নিয়মিত। একই মানুষ এক হাতে উচ্চবর্গের জন্য লিখছেন, অন্য হাতে বটতলার জন্য—এমন দৃষ্টান্তেরও অভাব নেই। তা ছাড়া সাধারণের শিল্পরুচিকে পালন এবং পুষ্টিসাধনের জন্য বটতলার খোদাই-শিল্পী ও মুদ্রাকরদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা সবিস্তারে আলোচনা করেছেন লেখক। বহুকথিত, বহুনিন্দিত বটতলার বই এবং ছবি নিয়ে তথ্যনির্ভর বিস্তারিত আলোচনা সম্ভবত এই প্রথম। শ্রীপান্থের নিজস্ব দৃষ্টিকোণ এবং তাঁর পরিবেশনভঙ্গি এ বইয়ের আর এক সম্পদ।