বিবরণ
১৯৭০-এর দশকেরই কোন একটি সময় উত্তর বঙ্গের জলপাইগুড়ি জিলার ডুয়ার্সের তিস্তা-সন্নিহিত অঞ্চলে সেটলমেন্টের জরিপের কাজ চলছিল। ডুয়ার্সের জমি- বড়-বড় জোতে, ফরেস্ট ডিপার্ট্মেন্টের অধীনে ফরেস্টে, চা-বাগানে, হাজার রকম জটিলতার গিঁটে জড়ানো। গয়ানাথ জোতদার তেমনই এক জমির মালিক, 'গিরি'। সে ডুয়ার্সের এই সব জমিই তার দখলে রাখে ও রাখতে চায়। নদীর তলার মাটি ও বন্যায় উপড়নো শালগাছও। প্রায় সমতুল্য লোভী ও বেআইনি দখলদার এখানকার চা-বাগানগুলিও।
তিস্তার পারে রাজবংশীদের বসবাস, সাঁওতাল-কোল-মুন্ডারা চা বাগানে বেগার খাঁটে, পূর্ববঙ্গের কৃষক বসতি গাড়ে এই নদীরই চরে। গড়ে ওঠে এক বিচিত্র সমাজ। তিস্তা ব্যারাজ নিয়ে নানা জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বার্থ ও বিরোধ দানা বাঁধে, ছড়ায় রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে।
এই বিচিত্র, বিপুল, বিস্তারিত জনজীবনের এত সব বদলের ভিতর থেকে তৈরি হয়ে ওঠে বাঘারু নামে এক মানুষ। যে এখানকার আদি মানুষদের একজন। তার বাপ কে সে তা জানে না। তার মা তাকে প্রসব করেছিল গভীর ফরেস্টে। তাকে বাঁচে থাকার জন্য বাঘের সঙ্গে হাতাহাতি লড়তে হয়েছিল। এখন তার পরিচয় সে গয়ানাথ জোতদারের মানষি, বাঘারু।
মহাকাব্যিক এই আখ্যান, যার উপাদান তিস্তা নদী, তার জনপদ, আর জনপদ আঁকড়ে বাঁচা মানুষ। আর এই পটভূমিতে তিস্তার পাড়ে মহিষের পিঠে শুয়ে, তিস্তার বানে গা ভাষিয়ে বাঘারু পরিণত হয় বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য চরিত্রে।