বিবরণ
গৌতম বুদ্ধের জীবৎকাল তথা ভারত-ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সময়কে অবিকল ও প্রাণবন্ত চেহারায় ফিরিয়ে আনতে চেয়েছেন বিদগ্ধ কথাকার বাণী বসু, দু-পর্বে সুবিন্যস্ত তাঁর এই বিশাল, বেগবান, বর্ণময় উপন্যাসে। এই কাহিনীর পটভূমি একদিকে ছুঁয়ে আছে মধ্যদেশ—অর্থাৎ আজকের বিহার উত্তরপ্রদেশের কিছু-কিছু অঞ্চল, অন্যদিকে চিরকালীন মানুষের চির জটিল মনোলোক। এই দ্বিবিধ পটভূমিতে ভিন্ন ভিন্ন স্তরে ক্রমশ উন্মোচিত হয়েছে এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী উপন্যাসের কথাবস্তু। কখনও রাজনৈতিক স্তরে—যেখানে উত্তর-পশ্চিম থেকে পুবে আরও পুবে সরে আসছে ক্ষমতার ভরকেন্দ্র, গান্ধার-মদ্ৰ-কুরু-পাঞ্চালের জায়গায় কোশল-বৈশালী-মগধ, পুরনো সাম্রাজ্যবাদের নীতির সঙ্গে ঘটছেন তুন মৈত্রী-ভাবনার সংঘাত। এই সংঘাতের কেন্দ্রে যেমন আছেন লোক বিশ্রুত গৌতমবুদ্ধ, আছেন ভারতের প্রথম ঐতিহাসিক সম্রাট বলে খ্যাত বিম্বিসার, কোশলপতি প্রসেনজিৎ ও নানান ধুরন্ধর রাজপুরুষবর্গ, তেমনই আছেন তক্ষশিলার বিদগ্ধ যুবক চণক, গান্ধারের বিদুষী নটী জিতসোমা, সাকেতের সন্ধিৎ সুরাজন্য কুমারতিষ্য। কখনও-বা অর্থনৈতিকস্তরে, যেখানে ক্ষমতার প্রতিসরণ ঘটছে শ্রেণীবিন্যাসেও। ধনই হয়ে উঠছে প্রকৃত ক্ষমতার উৎস। বাণিজ্যের সম্প্রসারণের সঙ্গে-সঙ্গে শাস্ত্রজীবী এবং শস্ত্রজীবীদের প্রতিযোগিতায় পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে আসছেন বণিক ও ধনজীবীরা। আবার সামাজিক স্তরে এঁদের সবাইকে ঘিরে বৃহত্তর জনজীবনে কৃষিজীবী, বৃত্তিজীবী, ভূম্যধিকারী নাগরিক, ছোটব্যবসায়ী, কবি, নটী, দাস প্রমুখের ক্ষেত্রে চলেছে শাশ্বত জীবনচর্যা। তবু তার উপরেও পড়ছে পরিবর্তনের নানান সূক্ষ্ম আঁচড়। বুদ্ধ কথিত ভাবাদর্শ বহুভাবে প্রবেশ করছে গণচেতনায়, জাগছে কখনও অনুকূল প্রভাব, কখনও-বা প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া। আর এই সমস্ত কিছুর মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছে ব্যক্তিগত সুখ-দুঃখ, আশা-আকাঙ্ক্ষা, সাফল্য-বিপর্যয়, সম্পর্কের ভাঙন ও পুনর্বিন্যাসের অন্তঃশীলপ্রবাহ। মনস্তাত্ত্বিক এইস্তর । এই চতুরঙ্গ স্তরের প্রতিচ্ছবির মধ্য দিয়ে মোহনার দিকে এগিয়ে-যাওয়া এই উপন্যাসে কিংবদন্তি হয়ে-ওঠা বহু ঘটনার ও অনুরূপ পরিস্থিতির নতুনতর ভাষ্য। আধুনিক জীবনের চোখে প্রাচীন জীবনের আপাত সরলতার মিথকে ছিন্ন করে এক অতিজটিল আবেগ-অনাবেগ, প্রেম-অপ্রেম, চেতন-অবেচতনের দ্বন্দ্বময় ব্যক্তি ও যৌথ-জীবনের কথা। যথোচিত ভাষায়, এবং যথাযোগ্য আঙ্গিকে|আনন্দ পুরস্কারে ভূষিত