বিবরণ
কলকাতার ইতিহাস যেমন রাজা-রাজপুরুষ, জমিদার-বিত্তবান, ধনিক-বণিকদের ইতিহাস, তেমনই এর সঙ্গে মিশে আছে বহু বনেদি পরিবারের নিষ্ঠা, শ্রম, অধ্যবসায় ও মনীষার কাহিনী। এইসব পরিবার নিজেরা যেমন সমৃদ্ধ হয়েছিলেন তেমনই সুন্দর করে গড়ে তুলেছিলেন তাঁদের এই প্রিয় শহরকে। শুধু বিদেশি শাসকদের অনুগ্রহভাজন হয়ে নয়, কেউ কেউ তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে স্বনির্ভর ও সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। সেই বনেদি পরিবারগুলিতে জন্মেছিলেন অনেক স্মরণীয় মনীষী, শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিক- যাঁরা এই গাঙ্গেয় শহরের বুকে জ্বেলেছিলেন রেনেশাঁসের দীপ্র আলো। যে-আলোর বিভা অচিরেই সারা বাংলা তথা সমগ্র ভারতে ছড়িয়ে পড়েছিল। বস্তুত কলকাতার ইতিহাসের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে সেইসব বনেদি পরিবারগুলির ইতিবৃত্ত। কলকাতার অতীত সমৃদ্ধি যা ছিল, তা প্রায় হারিয়ে গেলেও কলকাতা শেষ হয়ে যায়নি। বরং প্রতিদিন, প্রতি মুহুর্তে এই শহর নতুন করে গড়ে উঠেছে। নানা অবহেলা ও উদাসীনতায় পুরনো ঐতিহ্য চোখের আড়ালে চলে গেলেও তার রেশ থেকে গেছে শহরের বহমান জীবনপ্রবাহে৷ নতুনভাবে মানুষকে তা উজ্জীবিত করেছে। কলকাতা তাই একই সঙ্গে ঐতিহ্যময় ও আধুনিক। কলকাতার ইতিহাস তাই কখনও থেমে থাকেনি। তা চিরচলমান। সেই চলমান ইতিহাসে যেসব বনেদি পরিবারের ভূমিকা ও অবদান অপরিমেয়, তাদের প্রায়-হারিয়ে যাওয়া ইতিবৃত্ত কালগ্রাস থেকে উদ্ধার করেছেন দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও আলোকচিত্রী অলক মিত্র। কলকাতার ইতিহাস-গবেষণার ক্ষেত্রে অত্যন্ত মূল্যবান ও ব্যতিক্রমী নিদর্শন এই গ্রন্থ। সঙ্গে আর্ট প্লেটে ছাপা দুষ্প্রাপ্য সব আলোকচিত্র। ছবি এই বইয়ের সেরা সম্পদ। যেসব বনেদি বাড়ি আজ বিপন্ন, ধ্বংসের মুখে কিংবা পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন, তাদের ছবি স্মৃতিচিহ্নের মতো ধরা রইল একমাত্র এই বইতে।