বিবরণ
শুধু মহাকাব্যিক বিশালতা এবং ব্যাপ্তিতেই নয়, মহাভারত যে-কোনও তন্নিষ্ঠ পাঠককে বিস্মিত করে, মুগ্ধ করে তার অন্তর্লোকের কালজয়ী ঐশ্বর্যে। মানুষের জীবন ও সময়ের এমন বহু বিচিত্র এবং বহুবর্ণী লিপিমালা যে-কোনও সাহিত্যেই দুর্লভ। মহাভারতের রচনাকার যখন বলেন, এই মহান গ্রন্থ হিমালয়ের মতো উত্তুঙ্গ, মহাসাগরের মতো অতলস্পর্শী এবং এক রত্নসম্ভব আধার, তখন একে অতিশয়োক্তি বলে মনে হয় না। নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী দীর্ঘদিন ধরে মহাভারত চর্চায় নিরত আছেন। বলা উচিত, এই চিরন্তন কাব্যসম্পদের অন্যতর ব্যাখ্যা এবং উপস্থাপনায় অসামান্য দক্ষতার পরিচয় রেখেছেন তিনি। এই সুলিখিত ও সুচয়িত গ্রন্থটি কেবল কুন্তী ও তাঁর চারপুত্র কর্ণ, যুধিষ্ঠির, অর্জুন, ভীম এবং দ্রৌপদী-কৃষ্ণার চরিত্রের রেখাঙ্কন নয়। লেখক এই ছয়টি প্রধান চরিত্রের ওপর নানা দিক থেকে আলো ফেলে অনুপুঙ্খ রূপপ্রতিমায় তাদের নির্মাণ করেছেন। এ বড় কঠিন কাজ। কেননা মহাভারতের এক একটি চরিত্র এক একটি ‘হীরক-খণ্ডের’ মতো। আর কে না জানে, ‘এই হীরক-চরিত্রের কাঠিন্য ভেদ করা’ কতটা দুঃসাধ্য! কুন্তী চরিত্রের জটিল বর্ণময় বৈচিত্র্য, কৃষ্ণার উজ্জ্বল বিদগ্ধ দীপ্তি কিংবা যুধিষ্ঠিরের জীবনদর্শন, কর্ণের জীবনরহস্য, ভীমের জীবনশক্তি আর অর্জুনের জীবনতরঙ্গের বিপুল সম্ভাবনার বিশ্লেষণ সহজ কাজ নয়। এই গ্রন্থের রূপকার সেই অসাধ্যসাধন করেছেন মহাকাব্যের নিবিড় অধ্যয়ন ও উপভোগে। সাময়িকপত্রে প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই এই সুবিশ্লেষিত চরিত্রমালা পাঠক মহলে সাড়া জাগিয়েছিল। লেখকের বর্ণনা ও লিখনশৈলী আরও অভ্রভেদী ও মর্মানুগ হয়ে উঠেছে মূল মহাকাব্যের সংস্কৃত শ্লোকের ব্যবহারে। নমস্য পূর্বসুরিদের কথা স্মরণে রেখেও বলা যায়, এই গ্রন্থ মহাভারতের চরিত্রচর্চায় এক অভিনব সংযোজন।