বিবরণ
আমাদের দেশীয় সংস্কৃতিতে প্রাথমিকভাবে যৌনতা কখনই উপেক্ষিত ছিল না। বরং শৃঙ্গাররস এবং যৌনতার অবাধ ব্যবহারই প্রাচীন সাহিত্যগুলোকে সুন্দরতর করে তুলেছে—একথা যে কেউ স্বীকার করে নেবেন।
অতএব আজকের যৌনতার ব্যবহার সাহিত্যের ক্ষেত্রে উপেক্ষিত হয়ে থেকে যাওয়া আমরা স্বভাবতই বৈদেশিক অনুগ্রহে প্রাপ্ত হয়েছি একথা বলতেই হয়।
চর্যাপদ, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, বৈষ্ণব পদাবলীতে যে পরিমাণ যৌনতার চর্চা লক্ষ্য করা যায়, তথাকথিত আধুনিকতা চলে আসার পর ক্রমাণ্বয়ে তাকে এড়িয়ে চলার প্রবণতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। বাংলার সংস্কৃতির তন্ত্র নির্ভরতাই শরীরের গুরুত্বকে আলাদা করে প্রতিষ্ঠা পেতে হয়তো বা সহায়তা করেছে।
চর্যাপদে যে কথাগুলি সাধনার গুঢ়তত্ত্ব আকারে রূপকের আড়াল খুঁজছিল, শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে গ্রাম্যতার প্রভাবে পুষ্ট হয়ে সে যেন নিজ লজ্জাবরণ উন্মুক্ত করে দেয়। এমনকি পরবর্তীকালীন সাহিত্যগুলির ক্ষেত্রেও অশ্লীলতার অংশটিই ছিল সর্বাধিক জনপ্রিয়; তাই অনেক কবিকেই অনিচ্ছাসত্ত্বেও খেউড়ের দিকেই অধিক মনঃসংযোগ করতে হয়েছে।
ফলত সাহিত্যকে যদি বিনোদনের একটি মাধ্যম হিসাবে স্বীকার করতে আমাদের অসুবিধা না থাকে, সেক্ষেত্রে একথা স্পষ্টতই বলা যায় যে তৎকালীন মানুষ যৌনতাকে বিশেষভাবে উপভোগ করত, তাদের বিনোদনে এই চর্চা আনন্দ দিত কোনও একভাবে।
তাহলে আজ কি এই সভ্য-বেশধারী মানুষেরা উপভোগ করেন না যৌনতার চর্চাকে? বরং খানিক বেশীই উপভোগ্যতা লক্ষ্যণীয় হয়ে উঠেছে চারিপাশে। অন্তত ইন্টারনেট, ওয়েব মাধ্যম, চলচ্চিত্র এবং অন্যান্য নানা ভিডিও বিষয়বস্তু তো সেইদিকেই স্পষ্ট ইঙ্গিত করে।
আজকের দিনে যৌনতা নিয়ে তুলনামূলকভাবে মানুষের শুচিবায়ুতা কিছুটা হয়তো বা হ্রাস পেয়েছে। সমাজ তো ক্রমশ সেইদিকেই স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে। শ্লীল-অশ্লীল সংক্রান্ত প্রসঙ্গ তুললেই নির্দেশ করে দিচ্ছে খাজুরাহো-কোনারকের ভাস্কর্যের দিকে।