ঊনবিংশ শতকের বাংলা-সাহিত্য আন্দোলনের অন্যতম একজন পৃষ্ঠপোষক, লেখক এবং সমাজসেবক ছিলেন কালীপ্রসন্ন সিংহ। কালীপ্রসন্ন উত্তর কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত "সিংহ" পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তত্কালীন হিন্দু কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন কালীপ্রসন্ন। ১৮৫৭ সালে তিনি কলেজ ত্যাগ করেন। তিনি বাড়িতেই তার ইংরেজি, বাংলা ও সংস্কৃত শিক্ষা অব্যাহত রেখেছিলেন। সংক্ষিপ্ত জীবনকালে, কালীপ্রসন্ন অবিশ্বাস্য বহুমুখী গুণাবলির একজন মানুষ ছিলেন। মাত্র তেরো বছর বয়সে ১৮৫৩ খ্রিষ্টাব্দে তার বাংলাভাষা চর্চার জন্য বিদ্যোৎসাহিনী সভা প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলা থিয়েটারেও কালীপ্রসন্নের অপরিমেয় অবদান ছিল। কালীপ্রসন্ন বিদ্যোৎসাহিনী পত্রিকা, পরিদর্শক,সারবত্ত্বা প্রকাশিকা ও বিভিধার্থ সংগ্রহ প্রভৃতি পত্রিকার মত পত্রিকাগুলির সম্পাদনা এবং প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর সবচেয়ে প্রশংসিত রচনা হুতোম প্যাঁচার নক্শা। এই বইয়ে হুতোম প্যাঁচা ছদ্মনামে এক রসাত্মক পদ্ধতিতে তত্কালীন মধ্যবিত্ত সমাজের কার্যকলাপের সমালোচনা করেছিলেন তিনি। তৎকালীন কলকাতার আচার ব্যবহার, পালা-পার্বণ, সভা-সমিতি প্রভৃতি সামাজিক উৎসব এবং নানা ঘটনা হুতোম প্যাঁচার নক্শায় সরসভাবে বর্ণনা করেছিলেন তিনি। হুতোম প্যাঁচার নক্শা ছিল কথ্য ভাষায় লেখা প্রথম বাংলা বই। এছাড়াও তিনি রচনা করেন মহাভারতের বাংলা অনুবাদ সহ আরও কিছু গ্রন্থ।