বিবরণ
এই সেই কালজয়ী গ্রন্থ, একদা যার বিরুদ্ধে অশ্লীলতার অভিযোগে নিম্ন আদালত পাণ্ডুলিপি নষ্ট করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ১৯৭০ সালে সেদিনের কলকাতায় ‘রাত ভ’রে বৃষ্টি’ চিহ্নিত হয়েছিল সমাজের জন্য ক্ষতিকর বলে। মালতী মধ্যবিত্ত পরিবারের আকর্ষণীয় এক বাঙালি নারী, বিয়ে করে নয়নাংশুকে। বিয়ের বছর দশেক বাদে মালতী আবিষ্কার করে সে আর পরিতৃপ্ত নয় নয়নাংশুর বন্ধনে। স্বামী বা প্রেমিক হিসেবে নয়নাংশুকে আর ভাবতেই পারছে না। অংশু যখন মালতীর কাছে এসে শোয়, সে বোঝায় যে ‘ও-সব আর ভালো লাগে না’। সত্যি কথা হল নয়নাংশুর ‘জোর নেই, ভারি ভদ্রলোক, সে যাকে বুর্জোয়া ব’লে ঠাট্টা করে তা’ই, জয়ন্ত যাকে বুর্জোয়া বলে ঘেন্না করে তা-ই’। মালতী বরং এখন জয়ন্তর কাছে স্বস্তি পায়। জয়ন্তর বেপরোয়া স্বভাব পছন্দ করে। তার যে অংশটি কখনও অংশু ছুঁতে পারেনি, যেখানে সে ‘রক্তে মাংসে টকটকে রঙে একই সঙ্গে দাসী আর রানী হ’তে চায়’, জয়ন্ত সেখানে এসে নাড়া দিল, আর ‘উথলে উঠলো’ মালতীর ‘সমস্ত যৌবন আর নারীত্ব’। ধসে পড়ল বারো বছরের বিবাহিত জীবন। কিন্তু মালতী যে জয়ন্তকে ভালবাসে তা সে নিজে বোঝার আগেই জেনেছিল নয়নাংশু। কিন্তু তাঁর ব্যক্তিত্বের অহংকার নিয়ে সে, শেষ অবধি পৌঁছতে পারে না মালতীর কাছে। একসময় অংশু ভাবে বেঁচে থাকাটাই জরুরি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-উত্তর নাগরিক সমাজের ভেঙেচুরে যাওয়া যে-ছবি বুদ্ধদেব বসু এঁকেছেন তা বস্তুত বাস্তব। চরিত্রদের নিবিড় মনস্তাত্ত্বিক গভীরতা ভাষার সৌন্দর্যে কবিত্বপূর্ণ। মেধাবী আধুনিক। এর সমান্তরালে অগ্রসর হয়েছে রচনার আঙ্গিকগত কুশলতা। স্পষ্ট, চমকপ্রদ, সাহসী, সুন্দর এক চিরস্মরণীয় উপন্যাস ‘রাত ভ’রে বৃষ্টি’।